মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নির্যাতনে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।
অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যেই ভাবিয়ে তোলার মতো স্পর্শকাতর আরেকটি বিষয় সামনে এসেছে। আর তা হলো, রোহিঙ্গা নারীদের দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার হার ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের।
রোহিঙ্গা নারীদের যৌন ব্যবসায় নামানোর পেছনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এদেশীয় দালাল চক্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই শুধু নয়, সারাদেশেই সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্রটি।
কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও নোঙর যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। মূলত এইচআইভি নিয়ে কাজ করে নোঙর। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে উদ্বেগজনক হারে রোহিঙ্গা নারীদের দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে প্রতিষ্ঠানটি।
নোঙর এনজিও সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দালাল চক্র বেশ সক্রিয় রয়েছে এই কাজে। পাশাপাশি আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পরে আসা রোহিঙ্গা নারীদের নানা কৌশলে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছে। মূলত দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে এই কাজে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের।
রোহিঙ্গা যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মোটেও সুরক্ষিত নয়। ক্যাম্পের ভেতরেই দালালদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। কক্সবাজার এলাকার হোটেল ছাড়াও দালালরা যৌন ব্যবসার জন্য বাসা ও বিভিন্ন রেস্টহাউজ ব্যবহার করছে। রোহিঙ্গা নারীদের শুধু কক্সবাজারে নয়, দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে পরিচয় গোপন রেখে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েও রোহিঙ্গা নারীদের যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এছাড়া চাকরির প্রলোভনে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে তাদের। পাচারের পর বিদেশ বিভূঁইয়ে তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করানো হয়।
বিদেশে পাচারকালে রোহিঙ্গা নারী উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। ২০২১ সালের জুনে কক্সবাজার থেকে পাচারের সময় ২১ রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করা হয়। মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে আসলে যৌনকর্মী হিসেবে তাদের পাচার করা হচ্ছিল। এর একমাস আগেই উদ্ধার হন আরও ১৭ জন রোহিঙ্গা নারী।