
জবিতে অবহেলায়-অযত্নে পড়ে আছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি
অনলাইন ডেস্ক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের ডান পাশে অপরিত্যক্ত জায়গায় অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। বছরের পর বছর সংরক্ষণের অভাবে অবহেলিত এই প্রতিকৃতিটি। এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনের।
জাতীয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ১৫ আগস্টসহ সব ধরনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ফাঁকা পড়ে থাকে প্রতিকৃতিটি। বছরে এক-দুবারও পুষ্প অর্পণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় না কোনো সংগঠন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর কোনো ধরনের ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি না থাকায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা তরিকুল ও রাসেল এটি স্থাপন করেন। এরপর প্রতিকৃতিটি নারায়নগঞ্জ দুই আসনের এমপি এবং তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম বাবুকে দিয়ে উদ্বোধন করে পুষ্প অর্পণ করা হয়। সেই থেকে বিভিন্ন দিবস এবং অনুষ্ঠানে প্রতিকৃতিটিতে শাখা ছাত্রলীগসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতো।
সরজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বাম পাশে বটগাছ তলায় প্রতিকৃতিটির অবস্থান। চারপাশে আবদ্ধ থাকায় বর্তমানে এটি অকেজো অবস্থান পড়ে আছে। পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের অফিস এবং ময়লা- আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। এমনকি এভাবে আরকিছু দিন পড়ে থাকলে একসময় অযত্নে প্রতিকৃতিটি নষ্ট হয়ে পড়বে জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জনপ্রিয় অধ্যাপক ড.মীজানুর রহমান, ১৭ মার্চ ২০২০ সালে কলা ভবনে ক্ষণস্থায়ী মুজিব মঞ্চ স্থাপনের পর থেকেই ক্যাম্পাসে থাকা বঙ্গবন্ধুর একমাত্র প্রতিকৃতিটি অবহেলিত হয়ে পড়ে। এমনকি ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মাত্র দুবার নামমাত্র পুষ্প অর্পন করা হয় প্রতিকৃতিতে। এভাবে লোক চক্ষুর আড়ালে বছরের পর বছর চার দেয়ালের ভিড়ে পড়ে আছে প্রতিকৃতিটি।
এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এভাবে অবহেলায় আর অযত্নে ফেলে রাখা হয় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা তার থেকে কি শিক্ষা নিবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আছে কিন্তু কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান বা জাতীয় কোনো দিবসে এটি কোনো কাজে আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী রাফি আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত প্রতিকৃতি হেলাফেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। প্রশাসন যদি যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারে তাহলে তো এটা না থাকার যৌক্তিকতা আসে না বরং এটা থাকার ফলে জাতির পিতার অসম্মান হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা মানে বাংলাদেশকে অসম্মান করা। বাংলাদেশকে অসম্মান করার অর্থই মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বাংলাদেশের সকল নাগরিক আমরা। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে একই সূত্রেই গাঁথা। এরকম যে কোনো একটির অপমানে অপমান বোধ হয় আমাদের।
এ প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এটার বিষয়ে আগেও কথা বলেছি উপাচার্য এবং প্রধান ইঞ্জিনারের সাথে। কিছু সমস্যার জন্য এতদিন করতে পারি নাই কিন্তু শীগ্রই উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে প্রতিকৃতিটি অনেক উঁচু করবো যেন এটি সবার চোখে পড়ে এবং পুনরায় সবগুলো দিবসে পুষ্প অর্পন করবো। সেই সঙ্গে আমরা নিজ থেকে এটার যত্ন নিব এবং মুজিব মঞ্চে এরকম স্থায়ী একটি প্রতিকৃতি তৈরির করার বিষয় শীগ্রই কথা বলবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, জগন্নাথে বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি এভাবে আড়ালে পড়ে থাকবে বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। আমাদের ছোট ক্যাম্পাস হলেও আমরা এটাকে আর এভাবে বটগাছ তলায় রাখতে চাই না। এ আর্থিক বছরে আমরা এটাকে কি করা যায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই কে বা কারা এটি ওখানে তৈরি করেছে। আমরা তো সব অনুষ্ঠান এখন মুজিব মঞ্চে করি। এ বিষয়ে আমি সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে দেখবো প্রতিকৃতিটি কি করা যায়।
tags
comment / reply_from
related_post
Popular Posts
newsletter
newsletter_description