মধ্যসত্ব ভোগকারীদের দৌরাত্মে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন বহু কৃষক। অনেকে তিতিবিরক্ত হয়ে কৃষিকাজই ছেড়ে দেন। বেছে নেন নতুন কোনো পেশা। তবে একটু গুছিয়ে পরিকল্পনামাফিক কৃষিকাজ করলে কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। আবার এমন কিছু গাছ আছে যেগুলো একজন কৃষকের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারে। গাছ বিক্রি করে কোটিপতি হওয়াও অসম্ভব কিছু না। তেমনই একটি গাছ হলো চন্দন।
লাল চন্দন কাঠ চোরাচালানের বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত তামিল সিনেমা ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ বক্স অফিস কাঁপিয়েছে। সাধারণত তিন ধরনের চন্দন গাছ রয়েছে। সেগুলো হলো- শ্বেত চন্দন বা সাদা চন্দন, রক্ত চন্দন বা লাল চন্দন এবং পিত চন্দন। তবে বর্তমানে দুই ধরনের চন্দন গাছই শুধু পাওয়া যায়। পিত চন্দনের কথা শোনা গেলেও এখন এটি বিলুপ্ত প্রজাতির গাছের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
চন্দন গাছের চাষ করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করতে পারেন আপনিও। তুলনামূলকভাবে কম পরিচর্যাতেই বেঁচে থাকতে পারে এই গাছ। গাছটির পানির চাহিদাও কম। তাই খরাপ্রবণ অঞ্চলেও চন্দনের চাষ করা যেতে পারে। ওষুধি গুণসমৃদ্ধ চন্দন কাঠের দাম অনেক। প্রতি কেজি চন্দন কাঠের দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
শ্বেত ও রক্ত চন্দন ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতেও এগুলোর ব্যবহার রয়েছে। শ্বেত চন্দন কাঠের দামই সবচেয়ে বেশি।
চন্দন গাছের চারা করার উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস। এই তিন মাস সময়ে কাটিং পদ্ধতিতে চারা করা যায়। পরিপক্ক চারা লাগিয়েও চন্দন চাষ করা যায়। বছরের যে কোনো সময় এই পরিপক্ক চারা রোপন করা সম্ভব।
চারা রোপনের জন্য নিচু জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় চারা লাগাতে হবে। চন্দন ক্ষড়াসহিষ্ণু গাছ। বাংলাদেশের সব এলাকাতেই চন্দনের চাষ করা সম্ভব।
শ্বেতচন্দন গাছের সাধারণত রোগবালাই হয় না বললেই চলে। চন্দন কাঠের সুগন্ধ মানুষের কাছে আকর্ষনীয় হলেও পোকামাকড় তা একদমই সহ্য করতে পারে না।
চন্দন কাঠের চাষ দারুণ লাভজনক। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই গাছের বিশেষ কদর রয়েছে মানুষের কাছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে।
চন্দন কাঠ চাষে ব্যয়ের চেয়ে আয় বহুগুণ বেশি। অবশ্য লাভের অর্থ হাতে পেতে আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কারণ গাছ লাগানোর পর আয়ের মুখ দেখতে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে বিশেষ উপায়ে চাষের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেও চন্দন গাছ বিক্রির জন্য উপযুক্ত করা যায়।
সাধারণত একটি চন্দন গাছের পরিচর্যায় ২০ বছরে লাখ খানেক টাকা ব্যয় হয়। ২০ বছরের মাথায় অনায়াসেই ৬০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করতে পারবেন আপনি একটি চন্দন গাছ থেকে।
চন্দন গাছ থেকে কাঠ ছাড়াও তেল উৎপাদন হয়। ওষুধ তৈরির পাশাপাশি সাবান, প্রসাধনী, আতর এবং সুগন্ধী তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় চন্দন।
অন্যান্য গাছের তুলনায় চন্দন গাছের চারা একটু বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। অবশ্য একসঙ্গে অনেকগুলো চারা কিনলে ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যে একেকটি চারা মিলবে। চন্দন গাছ চাষ করা একদিকে সহজ, অন্যদিকে লাভজনক। এই গাছ চাষ করতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম লাগে। প্রথম দুই বছর গাছের সামান্য যত্ন নিলেই হয়। এরপর থেকে একা একাই বেড়ে উঠতে থাকে গাছ।
একেকটি পরিণত চন্দন গাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত কাঠ দেয়। মাটির উপরের ভাগের কাঠের দাম প্রতি কেজি ১৫ হাজার টাকা। মাটির ভেতরের অংশে থাকা গাছের শিকড় ইত্যাদি বিক্রি করেও ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে। তার মানে আজ একটি চন্দন গাছ লাগিয়ে ২০ বছর পর অনায়াসেই আপনি ৬০ লাখ থেকে থেকে এক কোটি টাকার মালিক হয়ে যেতে পারেন। গাছের সংখ্যা বেশি হলে আয়ও সেই অনুপাতে বাড়বে।
শ্বেত চন্দন অসাধারন ভেষজ গুণসম্পন্ন দুর্লভ প্রজাতির একটি গাছ। সাদা চন্দনের গাছ থেকে পাতন ব্যবস্থায় তেল নিস্কাশন করে প্রসাধনী, ওষুধ ও দামি আতর ও সুগন্ধি তৈরি করা হয়। শ্বেত চন্দন সাধারণত সুগন্ধি কাঠ হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে চন্দন কাঠের নির্যাস সাবান, পাউডার, আতর, ক্রিম, দাত মাজার পেস্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
ভেষজ শাস্ত্রে শ্বেত চন্দন বহু রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রক্তচাপ, ব্রঙ্কাইটিস, গনোরিয়া, বদ হজম, ডায়রিয়া, আমাশয়, ঘামাচি, বসন্ত রোগসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় চন্দন। রূপচর্চায় শ্বেত চন্দন ব্যবহারে জাদুকরী উপকার পাওয়া যায়।